১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যত্নের কার্যকরী পদ্ধতি

আপনি কি ১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যত্নের কার্যকরী পদ্ধতিগুলো ডাক্তারি মতে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে এসেছেন। কেননা আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয়বস্তুই হচ্ছে সেই সম্পর্কে। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!

১ মাসের-শিশুর-সর্দি-হলে-ঘরোয়া-উপায়



১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যা যা করণীয় তা ডাক্তারী মতে বিস্তারিত বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি আলহামদুলিল্লাহ।সুতরাং আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো...

পেজ সূচিপত্রঃ ১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যত্নের কার্যকরী পদ্ধতি

১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যত্নের কার্যকরী পদ্ধতি

সর্দি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও শিশুর জন্য সর্দি হলো একটি কষ্টকর এবং অস্বস্তিকর সমস্যা। যা সাধারণত ছোটখাটো সংক্রামক বা অ্যালার্জি থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই সর্দি হলে শিশুর কি অবস্থা, তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শিশুদেরকে বড়দের মত ওষুধ খাওয়ানো যায় না, আবার সামান্য রোগ-বালাই শিশুদের জন্য মারাত্মক কারণ হয়ে ওঠে।
 
১ মাসের-শিশুর-সর্দি-হলে-ঘরোয়া-উপায়
















তাই এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া যত্নই ভালো কাজে লাগে। নিচের ঘরোয়া উপায়গুলি অনুসরণ করলে আশা করা যায় শিশুর সর্দি ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়াও এই উপায়গুলি অনুসরণ করলে পরবর্তীতে শিশুর সর্দি না হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

নবজাতকের সর্দি-কাশির লক্ষণ

আপনার শিশুর মাঝে যদি নিচের লক্ষণগুলি দেখতে পান, তাহলে বুঝে নিবেন আপনার শিশুর সর্দি বা কাশি হয়েছে ।
  • শিশুর নাক দিয়ে পানি ঝরবে এবং নাক বন্ধ থাকবে।
  • শিশুর হাঁচি-কাশি থাকবে।
  • শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে এবং চোখ কিছুটা লাল থাকতে পারে।
  • শিশুর অল্প অল্প জ্বর ও থাকতে পারে।
  • শিশু কাঁদতে থাকবে এবং শান্ত হবে না।
  • শিশুর ঠোঁট নীলচে হয়ে যেতে পারে।

শিশুর মায়ের যত্ন নিশ্চিত করুন

শিশুর সর্দি-কাশি হওয়ার বিশেষ কারণ হচ্ছে শিশুর মায়ের ঠান্ডা লাগা। এজন্য শিশুর মায়ের উচিত নিজের পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়া। নিজের কান ও পা ঢেকে রাখা, ঠান্ডা পানি থেকে দূরে থাকা, ঘন ঘন হাত, মুখ ও পা না ধোয়া, ঠান্ডা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

শিশুর সর্দি-কাশির যত্নার্থে শিশুর মাকে একটুখানি মধু, আদার রস, তুলসী পাতার কাড়া ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। এতে করে মায়ের দুধের মাধ্যমে বাচ্চা সবকিছুই খেতে পারবে।

এক মাসের শিশুর হাইড্রেশন নিশ্চিত করুন

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমরা অনেকেই জানিনা যে, হাইড্রেশন কি? সহজ ভাবে বলতে গেলে হাইড্রেশন হলো, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল পদার্থের পরিমাণ নিশ্চিতকরণ। এক মাস বয়সী শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ এবং তরল খাবার হল মায়ের দুধ। 

বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত যে, ছোট শিশুর সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগলে তার মায়ের বুকের দুধ সব থেকে বেশি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাই শিশুর সর্দি হলে জরুরী কাজ হল ঘন ঘন মায়ের দুধ পান করানো।  শিশুর শরীরে মায়ের দুধ প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শিশুর শরীরে মায়ের দুধ লড়াই করে এবং শিশুকে দ্রুত সুস্থ করতে সাহায্য করে। শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গিয়ে দুধ পান করতে অসুবিধা হচ্ছে এমনটা দেখলে, তার মাথা একটু উঁচু করে ধরে দুধ পান করান। এতে করে শিশুর নিঃশ্বাস নিতে অনেকটা সহজ হবে এবং সে সহজেই দুধ পান করতে সক্ষম হবে।

এক মাসের শিশুকে উষ্ণ জামা-কাপড় পরান

যদি ঠান্ডা আবহাওয়া বা শীতের জন্য শিশুর সর্দি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে সব সময় উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে রাতে এবং ভোরের দিকে তাকে আরামদায়ক ও উষ্ণ জামা-কাপড় পরান। শিশুকে সুন্দর করে একটি পাতলা কম্বল, চাদর বা কাঁথা দ্বারা ঢেকে রাখুন, যেন তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

কখনোই শিশুকে ঢেকে রাখার জন্য মোটা কাপড় ব্যবহার করবেন না, এতে করে সে ঘেমে গিয়ে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এক মাস বয়সী শিশুরা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না, ফলে তাদের দ্রুত ঠান্ডা লেগে যায়। ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ফলে শরীরের সর্দি আরো বেড়ে যেতে পারে। এমনকি শিশুর শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। উষ্ণ ও আরামদায়ক জামা-কাপড় শিশুকে যত্নে রাখে এবং সর্দিকে কমাতে সাহায্য করে।

শিশুর ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন

শিশুর ঠান্ডা লাগলে রুমের তাপমাত্রা যেন সঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। যদি গরমের সময় শিশুর ঠান্ডা লাগে তাহলে, প্রয়োজনে এসি চালু বা বন্ধ করা অথবা ফ্যানের পাওয়ার কমানো বাড়ানো দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নবজাতকের রুম যেন, খুব ঠান্ডা না হয় আবার খুব গরমও না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুর রুমের জানালা একেবারে বন্ধ রাখলে বাতাস ভারি হয়ে যেতে পারে, তাই হালকা করে খুলে রাখুন যেন অক্সিজেন চলাচল করতে পারে। যদি শীতের সময় শিশুর ঠান্ডা লাগে তাহলে, শিশুর রুমে রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন রুমের বাতাস খুব বেশি শুকনো না হয়ে যায়।
 
যদি ঘরে বাতাস শুকনো হয়, তাহলে একটি বাটি পানি বা হিউমিডিফায়ার রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে ঘরটি আর্দ্র থাকবে এবং শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহজ হবে। শিশুর রুমে জানালার ফাঁক বা দরজার নিচ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশু পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কখনো শিশুর রুমে ভিড় তৈরি করবেন না এবং হট্টগোল বা চিল্লাচিল্লি করা থেকে বিরত থাকুন।

শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

শিশুকে সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকার কারণে শুধু সর্দি না বরং আরো রোগ-বালাই হতে পারে। আসুন জেনে নিই যেভাবে আপনার শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবেন...
১ মাসের-শিশুর-সর্দি-হলে-ঘরোয়া-উপায়


  • নাক পরিষ্কার করুন : সর্দির কারণে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পরিষ্কার পাতলা কাপড় দিয়ে শিশুর নাককে আলতোভাবে পরিষ্কার করুন। 
  • শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার রাখুন : তুলার বল বা ভেজা নরম কাপড় দিয়ে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো ( মুখ, নাক, চোখের চারপাশ ) আলতোভাবে পরিষ্কার করুন। শুকনো টিস্যু ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো, এতে করে শিশুর ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
  • কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন : শিশুর জামা-কাপড়, বিছানার চাদর ও ব্যবহারের জিনিসগুলো ময়লা হওয়ার আগেই ধুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সে জীবাণু থেকে মুক্ত থাকবে।
  • পরিবার সদস্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন : শিশুকে যারা দেখাশোনা করবেন বা স্পর্শ করবেন, তারা অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। এতে করে শিশু জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকবে।
  • শিশুর ঘরের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখুন : কখনো শিশুর ঘরে কোন প্রকারের ধোঁয়া ধরাবেন না। যেমন, সিগারেটের ধোঁয়া, কয়েলের ধোঁয়া, ইত্যাদি। এতে করে শিশুর শ্বাসকষ্ট ও সর্দিতে দ্বিগুণ প্রভাব পড়তে পারে। 
  • শিশুর খাদ্য সামগ্রী ও ফিডার পরিষ্কার রাখুন : শিশুর ফিডার, বিভিন্ন বোতল এবং কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো যা দিয়ে খাবার পরে শিশুর মুখ মুছে দেওয়া হয়, সেগুলো পরিষ্কার করে নিন।

শিশু ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া জরুরী

শিশুর সর্দি যদি আরাম না হয়ে, দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। তাহলে তাকে অবশ্যই শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যেহেতু নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই সর্দি-কাশির থেকেও অনেক সময় নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।

কখনো কখনো সর্দি শিশুর শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে, তাই দেরি না করে দ্রুত শিশু ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। এতে করে শিশু জটিল রোগ হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

সতর্কতা সমূহ

  • শিশু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহারে বিরত থাকুন : শিশুর সমস্যার ক্ষেত্রে অন্য কোন ডাক্তারের থেকে শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই জরুরী। তাই শিশুর সর্দির জন্য নাকে কোন প্রকারের ড্রপ ও ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
  • গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন : যেহেতু ১ মাসের শিশু তাই আপনাকে একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। শিশুর সর্দি যদি ২-৩ দিনের বেশি হয়ে যায়, এবং এর সাথে জ্বর, দুধ খাওয়া কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখকের শেষ কথাঃ ১ মাসের শিশুর সর্দির ঘরোয়াভাবে যত্নের কার্যকরী পদ্ধতি 

প্রিয় পাঠক, আপনার ১ মাসের শিশুর যদি সর্দি হয়ে থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী। কেননা ১ মাসের শিশুর সর্দি হলে বাসায় যেভাবে যত্ন নেওয়া দরকার যা যা করা দরকার আমরা তা ডাক্তারি মতে জানানোর চেষ্টা করেছি।

ঘরোয়া উপায়গুলি সঠিকভাবে আপনার শিশুর ওপর প্রয়োগ করলে আপনার শিশু সর্দি থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। আর যদি আমাদের এই আর্টিকেলটির দ্বারা আপনার উপকার হয়ে থাকে, তাহলে অন্যের উপকারের স্বার্থে শেয়ার করবেন এবং আর্টিকেলটিতে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আমাদেরকে জানাবেন। ধন্যবাদ !

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আইটি কিং বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

Khaled Saifullah Al-Fuad
Khaled Saifullah Al-Fuad
আমি একজন ব্লগার ও কনটেন্ট লেখক। আধুনিক জীবনের প্রয়োজনীয় তথ্য, জ্ঞান ও ইসলামিক বিধি-বিধান এবং বিভিন্ন ধরনের অনুপ্রেরণামূলক কনটেন্ট নিয়েই আমাদের এই যাত্রা। আমরা বিশ্বাস করি, সঠিক তথ্যই পারে আপনার প্রতিদিনের জীবনকে আরও সহজ, স্মার্ট ও সফল করে তুলতে।